রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

বই পড়ার অপরিহার্যতা



পর্দার সর্বব্যাপী জয়জয়কারের সময়টাতে ভালো বইয়ের মাঝে ডুবে থাকার কথা আমরা ভুলে যেতে বসেছি। সম্প্রতি হাফিংটন পোস্ট ১০০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান নাগরিকের ওপর জরিপ করে। এতে দেখা গেছে, শতকরা ২৮ ভাগ অংশগ্রহণকারী বিগত এক বছরে একটি বইও পড়েননি।

কিন্তু সত্য কথা হলো- বই পড়া অন্যান্য বিনোদনের চেয়েও বেশি মজার। কয়েকদিন আগে এক গবেষণা দেখিয়েছে, সাহিত্য পাঠ মনকে পড়া বা অধ্যয়ন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই কেন আপনি বই পড়তে বাধ্য তার কয়েকটি বিজ্ঞানসম্মত কারণ তুলে ধরা হলো;

১. বই মানুষকে শীতল করে
খুব দুশ্চিন্তায় আছেন? একটা বই হাতে নিন। ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখানো হয়, বই পড়া হচ্ছে চাপ মোকাবেলার সর্বোত্তম পন্থা। চাপ ঠেকানোর অন্যান্য পন্থা যেমন: গান শোনা, এককাপ চা কিংবা কফি পান অথবা একটু হেঁটে আসার চেয়েও কার্যকরি হলো বই পড়া। টেলিগ্রাফ সাময়িকীতে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল।

ওই গবেষণায় দেখা যায়, কোনো অংশগ্রহণকারী বইয়ের পাতা উল্টানো শুরুর ছয় মিনিটের মধ্যেই তার উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে যায় বা তিনি শীতল হয়ে যান। ওই গবেষণার গবেষক ড. ডেভিড লুইস টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘এটা যেকোনো বই-ই হতে পারে, আপনি আপনার প্রাত্যহিক চাপ থেকে বইয়ের জগতে হারিয়ে যেতে পারেন, লেখকের কল্পনার জগতকে আবিষ্কার করতে পারেন।’

২. মস্তিষ্ককে সচল ও ধারাল রাখে
এ বছরের শুরুতে ‘নিউরোলজি’ সাময়িকীতে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। ওখানে বলা হয়, দীর্ঘ সময়ের বই পড়ার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে। ওই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল ২৯৪ জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মৃত্যুকালে যাদের গড় বয়স ছিল ৮৯। দেখা যায়, তাদের মধ্যে যারা অনেক বছর ধরে বই পড়া ধরে রেখেছিলেন, তাদের স্মৃতিশক্তি হারানোর হারটা অন্যদের চেয়ে কম যারা বই কম পড়েছেন।

‘আমাদের গবেষণায় আমরা দেখিয়েছি যে, শৈশব থেকে মস্তিষ্কের ব্যায়াম বুড়ো বয়সের মস্তিষ্কের সবলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।’ এ গবেষণার লেখক রবার্ট এস উইলসন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। তিনি শিকাগোতে অবস্থিত রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে পিএইচডি করছেন। তিনি আরো বলেন, ‘এ গবেষণা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, আমাদের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে লেখা-পড়ার গুরুত্বকে অবজ্ঞা করতে পারি না।’

৩. আলজেইমার রোগ প্রতিরোধে বই
একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে ২০০১ সালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখানো হয়, যেসব বয়স্ক লোকেরা মস্তিষ্কের ব্যায়ামের সঙ্গে যুক্ত সৌখিন কাজ যেমন: বই পড়া ও ধাঁ ধাঁ সমাধান করে থাকেন তাদের আলজেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইউএসএ টুডে- কে এক সাক্ষাৎকারে লেখক ড. রবার্ট পি. ফ্রিডল্যান্ড বলেন, ‘ব্যবহারের ওপর যেমন অন্যান্য অঙ্গের বুড়ো হওয়া নির্ভর করে মস্তিষ্কের বেলাও এ কথাটি প্রযোজ্য। শারীরিক কর্মকাণ্ড যেমন আমাদের হৃৎপিণ্ড, মাংসপেশি ও হাড়কে শক্তিশালী করে। বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডও আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখে এবং মস্তিষ্কের রোগ ঠেকাতে ভূমিকা রাখে।’

৪. ভালো ঘুমে সহায়ক
ঘুমানোর আগে মন থেকে চাপ দূর করে ফেলা ও মনকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখার সুপারিশ করে থাকেন ঘুম বিশেষজ্ঞরা। ল্যাপটপ বা উজ্জ্বল আলো থেকে দূরে থেকে টেবিল ল্যাম্প বা বিছানার পাশের বাতিতে একটা বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলে ঘুম এসে যাবে অল্পতেই। তবে বইটি যেন রহস্য উপন্যাস বা ক্রাইম ফিকশন না হয়!

৫. সহানুভূতিশীল করে তোলে
গত জানুয়ারি প্লস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, একটা ভালো উপন্যাসে হারিয়ে যাওয়া আপনার সহানুভূতিশীলতাকে বাড়িয়ে দিবে। নেদারল্যান্ডে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখানো হয়, যেসব পাঠক কোনো উপন্যাসের কাহিনী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন তাদের সহানুভূতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ গবেষণায় দুজন লেখকের লেখা ব্যবহার করা হয়- আর্থার কোনান ডয়েল ও হোসে সারামাগো। এক সপ্তাহ এ দুজনের বইয়ের মাঝে ডুবে থাকার পর পাঠকদের সহানুভূতিশীলতার পার্থক্যটা পরিষ্কার হয় গবেষকদের কাছে।


৬. আত্মনির্ভরশীল এবং বিষন্নতা দূরে
সবাইকে জীবনের কোনো না কোনো সময় বিষন্নতা আক্রমণ করে। কেউ এটা থেকে দাঁড়াতে পারে আবার অধঃপতিত হয়ও অনেকে। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কিছু বই আছে যেগুলো আপনাকে এক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বিষন্নতা আপনার কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। এটা কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে ডাক্তারি চিকিৎসার চেয়েও বই পড়া অনেক কার্যকরি মহৌষধ। বিশ্বাস হচ্ছে না? পরীক্ষা করে দেখুন না!

এতগুণ যে বইয়ের, তাহলে কেন আর অপেক্ষা। হাতে নিন একটা বই। হারিয়ে যান সেখানে, বইয়ের ভেতরে বা কোনো চরিত্রের সঙ্গে!



হাফিংটন পোস্ট অবলম্বনে সাবিদিন ইব্রাহিম

২টি মন্তব্য:

  1. What about reading journals, newspapers or anything else? And if anybody reads like it online or on digital device would these have same impact. ?

    উত্তরমুছুন
  2. কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব, কিন্ডল বা মোবাইলে বই পড়া হচ্ছে প্রিয়তমার সাথে চ্যাট করার মত ব্যাপার! আর বই পড়া যেন প্রিয়তমার সাথে সরাসরি বাতচিত করা।

    চ্যাট করে অনেক প্রয়োজন পূরণ করা যায় কিন্তু সেটা সরাসরি কথা বলার প্রয়োজনীয়তাকে খারিজ করে দেয় না। এজন্য বইয়ের স্থলে এখন অনেক প্রযুক্তি এসে জায়গা করে নিচ্ছে কিন্তু তা বইয়ের বিকল্প নয়, সহযোগী মাত্র!

    উত্তরমুছুন