বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৪

আহেন, পিথাগোরাসের লগে বহি কতক সময়


‘মানুষ আছে, দেবতা আছে আর আছে পিথাগোরাসের মত কিছু।’ নিজের সম্পর্কে এমন অদ্ভূত ধারণা পোষণ করতেন পিথাগোরাস। পিথাগোরাস একই সাথে আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব আবার একই সাথে দার্শনিক, জীবন দর্শন প্রণেতা। তার নামে, তার দর্শনের অনুসারী একটি বিশেষ সম্প্রদায় অনেক দিন ধরে কাজ করে গিয়েছিল। পিথাগোরাস ও তার অনুসারীদের অদ্ভূত জীবনাদর্শ বর্তমানে আমাদের হাসির উদ্রেক করলেও তাদের সময়ে যথেষ্ঠ প্রভাব বিস্তার করেছিল। পিথাগোরাসের জীবন দর্শন অনেক অদ্ভূত মনে হওয়ার যথেষ্ঠ কারণ আছে।


বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘হিস্ট্রি অব ওয়েস্টার্ন ফিলসফি’তে এমন ১৫টি রীতি নীতির কথা বলেছেন(পৃষ্ঠা ৫১, ‘হিস্ট্রি অব ওয়েস্টার্ন ফিলসফি’)। তার মধ্যে মাত্র কয়েকটির কথা বলি:
১. যে জিনিস পড়ে গেছে এটা তুলবেনা।
২. সাদা মোরগ ছুঁয়োনা।
৩. রুটি ভাঙোনা।
৪. লোহা দিয়ে আগুন নাড়িওনা।
৫. গাঁদা ফুল ছিড়োনা।
৬. কলিজা খেয়োনা।
৭. মহাসড়কে হেঁটোনা।
৮. তোমার বাসার ছাঁদে চড়াইকে বসতে দিয়োনা।
৯. আলোকে পাশে রেখে কখনো আয়নার দিকে তাকিওনা।
১০. বিছানা থেকে উঠে বিছানা ঘুটিয়ে রাখবে এবং সেখানে শরীরের ছাপ রাখবেনা।

এমনতর বিচিত্র রীতিনীতি মেনে চলতো পিথাগোরাসের অনুসারীরা!

পিথাগোরাসের মতে আত্মা হচ্ছে অমর এবং এটা বিভিন্ন রূপ ধারণ করে। যা কিছুই জন্ম গ্রহণ করে সেগুলো বারবার ফিরে আসে বিভিন্ন রূপে। এজন্য যা কিছুর জীবন আছে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। পিথাগোরাস নিয়ে আরেকটি মিথ প্রচলিত তিনি সেইন্ট ফ্রান্সিসের মতো জীব জন্তুর কাছে প্রচার করতেন। (পৃষ্ঠা ৫২, হিস্ট্রি অব ওয়েস্টার্ন ফিলসফি’)


কয়েকটি ক্ষেত্রে পিথাগোরাস তার সময়ের চেয়ে কয়েক সহস্রাব্দ এগিয়ে ছিলেন। যেমন নারী পুরুষের সমতা। তিনি মনে করতেন তারা সমান, সম্পদের সমান অংশীদার এবং তারা একই ধরণের জীবন ধারণ করতে পারে।
পিথাগোরাসের আরেকটি বিখ্যাত তত্ত্ব হচ্ছে, ‘সবকিছুই সংখ্যা’। তিনি সংগীতে  সংখ্যার গুরুত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। বর্গ ও ঘনের ধারণা আমরা পিথাগোরাস থেকেই পাই। সংগীত নিয়ে তাদের আরেকটি শক্ত মত হচ্ছে এর রোগ সাড়ানোর ক্ষমতা আছে যেটা আসলে অনেক সুদূরপ্রসারী চিন্তা ছিল। সংগীত তাদের দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দাড়িয়েছিল কারণ এর মাধ্যমে প্রমাণ করা অতি সহজ ছিল যে ‘সবকিছুই সংখ্যা’।

অ্যারিস্টটলের মতে ‘পিথাগোরিয়ানরা নিজেদেরকে গণিতে আত্মনিমগ্ন করেছিল। জ্ঞানের এই ক্ষেত্রটির উন্নয়নে তারাই প্রথম কাজ করে।’(পৃষ্ঠা ৯, সক্রেটিস টু সার্তে, স্যামুয়েল ইনুচ স্টাম্ফ)
গণিত চর্চা আত্মার সর্বোত্তম শুদ্ধকারী হিসেবে মনে করতেন পিথাগোরাস। তিনি একই সাথে একটি ধর্মীয় গোষ্ঠি আবার একটি গণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্বীকৃত।

হোমারীয় দেব-দেবীদের নিয়ে রয়েছে তাদের সমালোচনা। তারা মনে করতো ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে হোমারের দেব-দেবীরা পূজনীয় হতে পারে না। কারণ তারা মানুষের মতই পাপ তাপে নিমজ্জিত। এমন কোন বস্তু মানুষের প্রার্থনার বিষয় হতে পারে না। এবং তারা কোন আধ্যাত্মিক শক্তিরও উৎসও নয়। (পৃষ্ঠা ১০, সক্রেটিস টু সার্তে, স্যামুয়েল ইনুচ স্টাম্ফ)

পিথাগোরাস এবং তার অনুসারী পিথাগোরিয়ানদের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব পরবর্তী দার্শনিকদের উপর তাদের প্রভাব। বিশেষ করে প্লেটোর উপর তাদের প্রভাব বিশাল। পুরো পাশ্চাত্য দুনিয়ার দর্শনকে যে ব্যক্তির দর্শনের ‘ফুটনোট’ বলা হয় তিনি সক্রেটিসের পরে আর যার দ্বারা সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছেন সেটা অবশ্যই পিথাগোরাস।




শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৪

Rainer Ebert Nuisance!

You don't drink milk; don't eat meat; so other should do the same, Rainer Ebert?
How poor and biased you are and how weakly you put all your points. We see you got better thrash from all around in the comments. Go, sir and preach in Europe and America so that the meat eaters of KFC, Hamburger, McDonald and all fast food shops stay away from meet.

You are totally gone away when you put vegetables instead of meat to eat.
You seem to be an irrational one without having proper study on the market, culture, religious practice and more importantly ecology. I see you didn't even make a basic study of ecology!

Because people eat meet, there is a market for the animals, huge money flows across the globe, employment number increased and there is a need to raise animals in the household which is more than 'humane' if you see. And the farmers wait for this season to sell their cattle and make a good profit and run their families. I think you are not a farmer or a shepherd.

I'll request you to go to a farmer and ask them not to sell their cattle and keep them to die old in their farms. I think they will give you a better thrash with the stick they use for thrashing their cattle when they gone disarray in the field in the time of digging soils with the plough!

Yes. It’s a good practice to be a vegan but don't be a fundamentalist in preaching others to be the same! You are living in the Plato's ideal world or in Thomas Moore's Utopia! And don't put a logic that plants don't have lives or they don't have senses etc etc. I think you will accept that they have lives! So when you will eat vegetables you are also killing lives, man!

Every living being should live upon the lives of others! Whatever we eat have lives and we don't eat plastic, iron or stones. Even stones grow. Do stone have life? You can dig out that question!

Link of Rainer Ebert's article:
http://www.dhakatribune.com/op-ed/2014/oct/02/can-slaughter-be-religion

মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

এবং হাঁটাহাঁটি, ‘নলেজ ওয়াক’ ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিডিং ক্লাব


হাঁটাহাঁটি আমাদের জ্ঞানানুসন্ধানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হাঁটতে হাঁটতেই আমরা বেশি জানতে পারি। আর এটাই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন এবং কার্যকর জ্ঞানানুসন্ধান পদ্ধতি। ট্রেনে বা বাসে এমনকি বিমানে করে আমরা জ্ঞানানুসন্ধান করতে পারি; বিমানের জানালা দিয়ে একটু আয়েশী উঁকি দিয়ে, ট্রেনের জানালা দিয়ে গ্রাম, গাছ-পালা ও ছোট ছোট(!) মানুষগুলোর দ্রুত হারিয়ে যাওয়া দেখে কিংবা বাসের জানালায় একটু আলস্য ভরা দৃষ্টিতে জীবন ও জীবনের বয়ে চলার দিকে একটু উকি দিয়ে দেখাতেও অশেষ জ্ঞানলাভ হতে পারে। কিন্তু কোন একটা জায়গাকে পাঠ, ওখানকার জীবনকে অধ্যয়ন, ইতিহাসকে জানা এবং এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য হাঁটাহাঁটির বিকল্প নেই। এজন্য এখনো কোন প্রজেক্ট কার্যকর করা, কোন এক বিশেষ জনগোষ্ঠীকে স্টাডি করা বা কোন বিষয়ে গভীর জ্ঞানানুসন্ধানের জন্য "ফিল্ডওয়ার্ক" নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যুক্ত আছে আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির সাথে।


আগেকার দিনের মুনী, ঋষী,সাধু-সন্তু, পণ্ডিতজনেরা হেঁটেছেন অনেক।
এখনকার বিজ্ঞজন, পণ্ডিতজনেরাও তো কম ঘুরেননা, কম হাঁটেননা! হাঁটাহাঁটির সাথে খুজে দেখা, অবলোকন করা, গভীর অনুসন্ধান উতপ্রোতভাবে জড়িত। যাদের জ্ঞানানুসন্ধানে হাঁটাহাঁটি বা ‘হন্টনকর্ম’ যুক্ত নয় তাদের তথ্য ও তত্ত্ব বিশ্বাসযোগ্য নাও হতে পারে, ভুল হতে পারে, অকার্যকর হতে পারে! “আরাম কেদারার” পণ্ডিতের সংখ্যা দেশে অভাব নেই। এখন ধূলাবালি মাখা পণ্ডিতও দরকার। আজকের পৃথিবীতে যারা পৃথিবীকে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের মধ্যে এমন শ্রমিক শ্রেণীর পণ্ডিতদের কঠোর শ্রমের উপরই দাড়িয়ে আছে তাদের ক্ষমতার ইমারত। আমরা বিশ্বকে কি দিতে পারি তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমরা আমাদের দেশকে কি দিচ্ছি। এজন্য ঘরে বসে থেকে বই-পুস্তক কপ্চাইলেই হবেনা। বইকে চেখে দেখতে হবে জীবন্ত বইয়ের সাথে। এক একটা জায়গা এবং তাদের জনগোষ্ঠী এক একটা জীবন্ত বই। প্রত্যেকটা জায়গা তার বই খুলে রেখেছে,তাদের ইতিহাস গুনগুন করে বলছে। আমাদেরকে ঐসব জীবন্ত বই পাঠ করতে তাদের কাছে চলে যেতে হবে, তাদের ইতিহাসের গুনগুনানি শুনতে হবে। জীবন্ত বইয়ের সাথে মিলিয়ে দেখতে হবে মৃত পৃষ্ঠাওয়ালা গ্রন্থপুঞ্জিগুলোকে!

এজন্য ঢাকা ইউনিভার্সিটি রিডিং ক্লাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড হচ্ছে ‘নলেজ ওয়াক’। আমরা গত বছর সোনারগাঁ ও পানাম নগর গিয়েছিলাম আমাদের নলেজ ওয়াকে। সোনারগাঁর ইতিহাস, ঐতিহ্য আর গল্পগাথা মেলে ধরেছিলেন আমাদের নলেজ ওয়াকার লেখক শামসুজ্জোহা চৌধুরী, বাংলার শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন ও ইতিহাসের ছাত্র ম্যাক্স সজীব।

২০১৪ এ আমরা গিয়েছি দেশের একটি সেরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। এই শীতে তার সৌন্দর্যের ঢালি খুলে রাখে যেন এই অনন্য ক্যাম্পাসটি। আমরা দেখেছি প্রকৃতি, পাখি, গাছ, পদ্ম, জল আর যা আছে সব! আর বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, অনুষদ, বিভাগ তার কৃতী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে পরিচিত হওয়া,তাদের ইতিহাস এবং জাতীয় জীবনে ঐসব বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভূমিকা নিয়ে জানার চেষ্টা তো ছিলই। আর একেবারে নীরব হয়ে দীর্ঘক্ষণ হাঁটার অভিজ্ঞতা মনে রাখার মত। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝে সংক্ষিপ্ত লেকচার যা আমাদের জানার পরিধি বাড়িয়ে দিয়েছে এ কথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। সাপের মত আকারের বিভিন্ন জলাধারের পাশে দুর্বাঘাসে বসে গান ও কবিতা আবৃত্তি শোনা এবং বিভিন্ন জনের অনুভূতি শোনা অনেক বড় অভিজ্ঞতা ছিল।


মাঝখানে আমরা গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে আসলাম, মনসুর মুসার সাথে আলাপ করলাম এবং সেখানকার একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলাম।


শেষ বিকালে জাতীয় স্মৃতি সৌধের কাছে গিয়ে আমাদের মন শ্রদ্ধায় ভরে গেল বাংলাদেশ নির্মাণে অজস্ত্র শহীদের ত্যাগের কথা মনে করে। স্মৃতি সৌধের সামনে বসে আমরা কবিতা আবৃত্তি ও বিভিন্ন জনের অনুভূতির কথা শুনলাম। সবশেষে সেখান থেকে যখন ফিরে আসছিলাম তখন রিডিং ক্লাবের ব্যানার সামনে রেখে মৌন মিছিল করে ফিরছিলাম।

আমাদের মন ও মনন প্রতিজ্ঞায় দৃঢ় হয়েছিল, সংকল্পে অনঢ় হয়েছিল একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রত্যয়ে।

আরেকটি নলেজ ওয়াকের কথা ভেবে ভেবে দিনটি শেষ হয়েছিল। অপেক্ষা করছি এমন আরেকটি দিনের অপেক্ষায়।



সাবিদিন ইব্রাহিম
০৭.০২.২০১৪

রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

বই পড়ার অপরিহার্যতা



পর্দার সর্বব্যাপী জয়জয়কারের সময়টাতে ভালো বইয়ের মাঝে ডুবে থাকার কথা আমরা ভুলে যেতে বসেছি। সম্প্রতি হাফিংটন পোস্ট ১০০০ জন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকান নাগরিকের ওপর জরিপ করে। এতে দেখা গেছে, শতকরা ২৮ ভাগ অংশগ্রহণকারী বিগত এক বছরে একটি বইও পড়েননি।

কিন্তু সত্য কথা হলো- বই পড়া অন্যান্য বিনোদনের চেয়েও বেশি মজার। কয়েকদিন আগে এক গবেষণা দেখিয়েছে, সাহিত্য পাঠ মনকে পড়া বা অধ্যয়ন করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই কেন আপনি বই পড়তে বাধ্য তার কয়েকটি বিজ্ঞানসম্মত কারণ তুলে ধরা হলো;

১. বই মানুষকে শীতল করে
খুব দুশ্চিন্তায় আছেন? একটা বই হাতে নিন। ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্স পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখানো হয়, বই পড়া হচ্ছে চাপ মোকাবেলার সর্বোত্তম পন্থা। চাপ ঠেকানোর অন্যান্য পন্থা যেমন: গান শোনা, এককাপ চা কিংবা কফি পান অথবা একটু হেঁটে আসার চেয়েও কার্যকরি হলো বই পড়া। টেলিগ্রাফ সাময়িকীতে ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল।

ওই গবেষণায় দেখা যায়, কোনো অংশগ্রহণকারী বইয়ের পাতা উল্টানো শুরুর ছয় মিনিটের মধ্যেই তার উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে যায় বা তিনি শীতল হয়ে যান। ওই গবেষণার গবেষক ড. ডেভিড লুইস টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘এটা যেকোনো বই-ই হতে পারে, আপনি আপনার প্রাত্যহিক চাপ থেকে বইয়ের জগতে হারিয়ে যেতে পারেন, লেখকের কল্পনার জগতকে আবিষ্কার করতে পারেন।’

২. মস্তিষ্ককে সচল ও ধারাল রাখে
এ বছরের শুরুতে ‘নিউরোলজি’ সাময়িকীতে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। ওখানে বলা হয়, দীর্ঘ সময়ের বই পড়ার অভিজ্ঞতা বৃদ্ধ বয়সে মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সাহায্য করে। ওই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল ২৯৪ জন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মৃত্যুকালে যাদের গড় বয়স ছিল ৮৯। দেখা যায়, তাদের মধ্যে যারা অনেক বছর ধরে বই পড়া ধরে রেখেছিলেন, তাদের স্মৃতিশক্তি হারানোর হারটা অন্যদের চেয়ে কম যারা বই কম পড়েছেন।

‘আমাদের গবেষণায় আমরা দেখিয়েছি যে, শৈশব থেকে মস্তিষ্কের ব্যায়াম বুড়ো বয়সের মস্তিষ্কের সবলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ।’ এ গবেষণার লেখক রবার্ট এস উইলসন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। তিনি শিকাগোতে অবস্থিত রাশ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারে পিএইচডি করছেন। তিনি আরো বলেন, ‘এ গবেষণা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, আমাদের প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে লেখা-পড়ার গুরুত্বকে অবজ্ঞা করতে পারি না।’

৩. আলজেইমার রোগ প্রতিরোধে বই
একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে ২০০১ সালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখানো হয়, যেসব বয়স্ক লোকেরা মস্তিষ্কের ব্যায়ামের সঙ্গে যুক্ত সৌখিন কাজ যেমন: বই পড়া ও ধাঁ ধাঁ সমাধান করে থাকেন তাদের আলজেইমার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। ইউএসএ টুডে- কে এক সাক্ষাৎকারে লেখক ড. রবার্ট পি. ফ্রিডল্যান্ড বলেন, ‘ব্যবহারের ওপর যেমন অন্যান্য অঙ্গের বুড়ো হওয়া নির্ভর করে মস্তিষ্কের বেলাও এ কথাটি প্রযোজ্য। শারীরিক কর্মকাণ্ড যেমন আমাদের হৃৎপিণ্ড, মাংসপেশি ও হাড়কে শক্তিশালী করে। বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডও আমাদের মস্তিষ্ককে সচল রাখে এবং মস্তিষ্কের রোগ ঠেকাতে ভূমিকা রাখে।’

৪. ভালো ঘুমে সহায়ক
ঘুমানোর আগে মন থেকে চাপ দূর করে ফেলা ও মনকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখার সুপারিশ করে থাকেন ঘুম বিশেষজ্ঞরা। ল্যাপটপ বা উজ্জ্বল আলো থেকে দূরে থেকে টেবিল ল্যাম্প বা বিছানার পাশের বাতিতে একটা বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলে ঘুম এসে যাবে অল্পতেই। তবে বইটি যেন রহস্য উপন্যাস বা ক্রাইম ফিকশন না হয়!

৫. সহানুভূতিশীল করে তোলে
গত জানুয়ারি প্লস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, একটা ভালো উপন্যাসে হারিয়ে যাওয়া আপনার সহানুভূতিশীলতাকে বাড়িয়ে দিবে। নেদারল্যান্ডে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখানো হয়, যেসব পাঠক কোনো উপন্যাসের কাহিনী দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়েন তাদের সহানুভূতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ গবেষণায় দুজন লেখকের লেখা ব্যবহার করা হয়- আর্থার কোনান ডয়েল ও হোসে সারামাগো। এক সপ্তাহ এ দুজনের বইয়ের মাঝে ডুবে থাকার পর পাঠকদের সহানুভূতিশীলতার পার্থক্যটা পরিষ্কার হয় গবেষকদের কাছে।


৬. আত্মনির্ভরশীল এবং বিষন্নতা দূরে
সবাইকে জীবনের কোনো না কোনো সময় বিষন্নতা আক্রমণ করে। কেউ এটা থেকে দাঁড়াতে পারে আবার অধঃপতিত হয়ও অনেকে। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার কিছু বই আছে যেগুলো আপনাকে এক্ষেত্রে সাহায্য করবে। বিষন্নতা আপনার কাজ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। এটা কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে ডাক্তারি চিকিৎসার চেয়েও বই পড়া অনেক কার্যকরি মহৌষধ। বিশ্বাস হচ্ছে না? পরীক্ষা করে দেখুন না!

এতগুণ যে বইয়ের, তাহলে কেন আর অপেক্ষা। হাতে নিন একটা বই। হারিয়ে যান সেখানে, বইয়ের ভেতরে বা কোনো চরিত্রের সঙ্গে!



হাফিংটন পোস্ট অবলম্বনে সাবিদিন ইব্রাহিম

শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

'The Structure of Inventive Thought' (Udvaboni Chintar Kathamo) by S. M. Zakir Hussain: A Brief Review



I've finished reading 'The Structure of Inventive Thought' (Udvaboni Chintar Kathamo) by S. M. Zakir Hussain for the second time after a three years break!

Its subtitle is 'how we understand the external world'.
This book with a preface by Dr. Shahidullah Mridha is a rare inclusion in the world of Bangla books. We need to have such books in large number. In every year the 'Ekhushe Boi Mela' is flooded with the books of poetry, novel and political murmuring. Bangladesh should create more philosophical, scientific and mathematical texts as well.
Mr. S. M. Zakir Hussain is famous here in Bangladesh for his books on English language and grammar especially 'A Preface to English Language'. And he is related to Future Group as well which deals English language business which is really a profitable business here!
But which is unknown to many and which is the real essence of this man is his thought provocative books.
'The Structure of Inventive Thought' (Udvaboni Chintar Kathamo) by S. M. Zakir Hussain is one of the complex bangla books come into my way. But it is an adventurous journey in the puzzling alley of complex but necessary thoughts!
This 180 pages long book was first published in 1999 and 2nd edition that is in my hand was published in 2004.
This book, quite surprisingly dedicated to the BUET students who, in the writers' opinion are his attentive/regular reader.
In this book we can get to know the structure of innovative thoughts and how we can proceed to our inventions, creations of original sorts.
Whenever I come to the title of the book 'The Structure of Innovative Thought' a question poke me again and again why it is not 'The Structure of Creative Thought'!
What is the difference come into our mind when we talk 'creative, innovative or even inventive!'
Whatever the writer has the valid rights to use words in his own way.
I just want to thank S. M. Zakir Hussain for writing such a thought provoking and highly philosophic book!

Dhaka University Reading Club: A Brief Introduction





Dhaka University Reading Club was formed in 2011 with the aim to jerk the declining knowledge culture of University of Dhaka and Bangladesh as a broad canvass.
We consider First National Professor Abdur Razzak, Ahmad Sofa, Ahmad Sharif, Humayun Azad, Abul Hosen as our principal source of inspiration.




We organize weekly session on Thursday evening at Senate Building, DU. Our session run for 119 minutes where the key speaker gets 40 minutes. After his/her speech the floor is open for all participants whom we consider our main speakers!

In our session we appreciate comments/opinions rather than questions on the notion, no refute of anybody's statement is allowed except the point of Information. The philosophy behind this practice is that we want our young generation to think in depth and make them aware that each problem has a solution & probably more than one.

A facebook group is created to serve the purpose of informing regular updates and sharing reading experiences among readers in continuation of our sessions and regular activities, hence, creating new discourses.

Please don't post anything irrelevant to DURC in this group & violation will be resulted on banning, both temporary and permanent.

Our Facebook Group: https://www.facebook.com/groups/durcorg/

Our Facebook Page: http://www.facebook.com/durcorg

Mobile Contact: +8801685818801, +8801723490668

Our Sites: www.durcbd.weebly.com
                 www.durcbd.wordpress.com


This club is a platform to unite as many serious readers can so that we can share our reading methods, reading experiences and the problem we face while reading. 
We've arranged "Abdur Razzak Shoron Shova" on November, 2013 for the third time where Honorable Finance Minister Dr. Abul Mal Abdul Muhit was present along with luminous guests like Dr. Hossen Zillur Rahman, ex adviser to the Caretaker Government, Monsur Musa, ex-Director of Bangla Academy and Abul Khair Litu, the Chairman of Bengal Group and many more.

We had our 100th lecture with Nobel Laureate Dr. Yunus on February 3, 2014.

We are very happy to inform you that DURC is going to organize 'National Young Intellectual Conference (NYIC)' in the last week of November (possible date is 27/28/29 Nov). We want to bring maximum representatives from the maximum universities across the country. There will be series of lectures on diverse topics and issues from different university students across the country and hopefully there will be some international guests as well from our neighboring countries.

The participants will give 25 minutes lecture (probable). Those who are interested to join in this greatest young intellectual conference of the country are requested to submit their name sooner. And the complete lecture note or lecture outline. Every university will surely be allowed to give one representative at least, the more the better.

Reading Club is a way of living. Everybody can be a part of this think tank organization. Just join our ADDA and regular sessions.  After being associated with DURC it is expected from you that you read regularly at least 50 pages beyond newspaper.

We, the regular members actually vie with each other in passing more time in the Central Library and Public Library. We like to come to library at 8 am in the morning when the library open and like to stay up to the last bell that is at 9 (8.45) pm at night. We attend classes from library. After the class we come back to library again. We also have our tea together and adda after 4 pm. Our adda usually go for 2 hours. It is not quite mandatory that one should stay whole hours. If anybody has exams, class or anything serious to do he/she can leave the adda easily.

Actually there is no bindings there rather than intellectual bindings we are attached with which force us to stay together!

You are welcome to the way of reading club.

রবিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

এলান হেনিংয়ের স্ত্রী বলছি...



ঘটনাটা গেল শনিবারের। এক ভিডিও বার্তা দেখে আতকে উঠলেন বারবারা হেনিং। ভিডিও বার্তায় এলান হেনিংকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)! পুরো ভিডিও দেখতে পারলেন না বারবার-মুখ ঢেকে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। ৪৭ বছর বয়সী এলান হেনিং যে তার স্বামী।
এরপর নাওয়া-খাওয়া প্রায় ভুলেই গেলেন বারবারা। রাত-দিন ছোটাছুটি শুরু করলেন ব্রিটেনের মুসলিম আলেম, নেতা থেকে শুরু করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সব জায়গায়। একটাই আকুতি, তার স্বামীর জীবনটা যেন রক্ষা পায়। শেষমেশ আইএসকে লক্ষ্য করে একটা চিঠিও লিখলেন বারবারা। মর্মস্পর্শী সেই চিঠি পড়লে যে কারও হৃদয় গলে, কিন্তু আইএস তাতে কর্ণপাত করবে কি না কে জানে!
বারবারা লিখেছেন, ‘আমি বারবারা হেনিং। এলান হেনিংয়ের স্ত্রী। গত ডিসেম্বরে এলানকে বন্দি করা হয় এবং তারপর থেকে ইসলামিক স্টেটের হাতে সে বন্দি।
এলান খুব শান্তিপ্রিয় এবং পরোপকারী। যুক্তরাজ্যে সে তার পরিবার ও ট্যাক্সি ড্রাইভারের চাকুরী ছেড়ে সিরিয়াতে চলে আসে। তার উদ্দেশ্য ছিল সিরিয়ার গাড়িবহরে গাড়ি চলানো। কিন্তু এখানে সবচেয়ে করুণ অবস্থায় থাকা মানুষদেরকে দেখে তার পরপোকারী মন কেঁদে ওঠে। সে সাহায্য করার জন্য তার মুসলিম বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে কাজে নেমে পড়ে।
তাকে যখন আটক করা হয় তখন সে একটা অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছিল। অ্যাম্বুলেন্সে করে দুর্দশাগ্রস্ত সিরিয়ানদের জন্য খাবার ও পানি বহন করা হচ্ছিল। সিরিয়ায় থাকার পেছনে এর চেয়ে বড় বা ছোট কোনও উদ্দেশ্য ছিলনা এলানের। সে শুধু সমব্যথী হয়েই সেখানে সাহায্য করতে গিয়েছিল।
আমি আইএস এবং যারা এলানকে আটক করে রেখেছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। আমি তাদের কাছে কয়েকটি বার্তা পাঠিয়েছি। কিন্তু তারা এর কোনও জবাবই দেয়নি। আমি অনুরোধ করছি যারা এলানকে আটক করে রেখেছে তারা যেন খুব তাড়াতাড়ি আমার বার্তার জবাব দেয়।
আমার বার্তাগুলো যদি তাদের হাতে পৌছায় তাহলে আমি তাদের কাছে অনুরোধ করবো তারা যেন আমার স্বামী এলান হেনিংয়ের বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখে।’

সূত্র: বিবিসি
তরজমা: সাবিদিন ইব্রাহিম

শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ইকোনমিস্টের নিবন্ধ: বাংলাদেশের রাজনীতি, একক এবং অদ্বিতীয়ের শাসন



ছবি: ইকোনমিস্ট



মূল: ইকোনমিস্ট
তরজমা: সাবিদিন ইব্রাহিম

সম্প্রতি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আপীল প্রত্যাখ্যান করেছে দেশটির সুপ্রীম কোর্ট। তার বিরুদ্ধে একটি দুর্নীতি মামলায় বিচারক নিয়োগ নিয়ে তিনি আপীল করেছিলেন। এখন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া চালাতে আর বাঁধা রইলো না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি তার স্বামীর নামে প্রতিষ্ঠিত একটি দাতব্য সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তার স্বামী জিয়াউর রহমান ছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন সেনানায়ক যিনি পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।
তার নামে প্রতিষ্ঠিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টএর অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। যদি তিনি অপরাধী সাব্যস্ত হন তাহলে দেশটির এই দ্বিতীয় ক্ষমতাবান নারী জেলের মুখ দেখতে পারেন।

আদালতের এই রুলিং এর মাধ্যমে আরেকটি বিষয় পরিস্কার হয়েছে সেটা হলো দেশটির এখন সবচেয়ে ক্ষমতাবান নারীটি হচ্ছেন শেখ হাসিনা। এই ঘটনাগুলো ঘটছে যখন আট মাস আগে একটি একতরফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। খালেদা জিয়ার বিএনপি সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছিল। নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে হাউস অ্যারেস্ট করে রেখেছিল আর জামাতকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। কোন ধরণের বিরোধিতা ছাড়াই শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।

প্রথম দিকে একটু রয়ে সয়ে কথা বলতো আওয়ামী লীগ এবং নতুন নির্বাচনের কথাও এসেছিল অনেকের মুখ থেকে। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার এখন তাদের পথেই হাঁটছে। শেখ হাসিনার প্রতি সহানুভূতিশীল অংশটি মনে করছে তার শাসন ঠিক চলছে। তিনি যদি দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে পারেন তাহলে তার থেকে যাওয়া উচিত। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর দারিদ্রের হার দ্রুত কমে। ২০০৬ সালে খালেদা জিয়ার পতনের পর দেশটির অর্থনীতির আকারের চেয়ে এখন এটা দ্বিগুণ বেড়েছে।

২০০৬ পরবর্তী সময়ে এ দুই বেগমদেরকে আটক রেখেছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার। কিন্তু কিছুদিন দেশ শাসনের পর সেনাবাহিনী এটা আবিস্কার করতে সক্ষম হয় যে দেশ শাসন খুব মজার জিনিস নয় যেমনটা তারা কল্পনা করেছিল। এর চেয়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে প্রতিবছর ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা অনেক নিরাপদ। এদিকে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেটও বাড়ছে প্রতিবছর। এবং তাদের আয়ের পকেট ভারি করার জন্যে এসেছে একটি নতুন পাঁচ তারকা হোটেল ও পশু খামার।

সেনা পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা সরকার শক্ত হাতে ক্ষমতার গিট ধরতে লাগলেন। আদালতকে নিজেদের হাতে নিয়ে গেলেন, গণমাধ্যম সমালোচকদের নীরব করে দিলেন এবং সংবিধানকে নিজেদের সুবিধামত ব্যবহার করতে লাগলেন। সংসদে রয়েছে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এবং তাদের জোট সদস্য সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের জাতীয় পার্টি একটি অনুগত বিরোধি দলের ভূমিকা পালন করছে। ঠিক এই সময়টাতেই গত ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে সংবিধান সংশোধনী পাশ হয় যেখানে পার্লামেন্টকে বিচারপতিদের বরখাস্ত করার ক্ষমতা দেয়া হয়।
পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া বিএনপির সামনে আর কিছু নেই এবং সেটা ২০১৯ সালের আগে হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছেনা। আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারী শাসন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়ে এসেছে বিএনপি। যদিও সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির গতি হ্রাস পেয়েছে, ব্যাংকিং সেক্টর খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব নাজুক। কিন্তু তারপরও আওয়ামী লীগকে টলিয়ে দিতে পারে এমন বড় কোন সংকট নজরে পড়ছেনা।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার খুব ধূর্তামির পরিচয় দিচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংগঠনের দায়ে অভিযুক্ত অনেকের বিচার প্রক্রিয়া ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। একটি বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে বিচারিক প্রক্রিয়া চলছিল। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বেশিরভাগই জামাত-ই ইসলামীর সদস্য। গত ১৭ সেপ্টেম্বর জামাত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদির মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল।

গতবছর সাঈদির মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলে বাংলাদেশে ভয়াবহ রক্তপাতের সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ রুলিংটি এবং যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতকরণের মাধ্যমে এটা দেখা যাচ্ছে যে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে এর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে এসেছে।

সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের আগের চেয়ে এখন সরকার বেশ জনপ্রিয়। এদিকে বিএনপি অভিযোগ করছে এই জনমত যাচাই প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ। তারা গত বছর মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার কথা উল্লেখ করে (এই বছরের স্থানীয় নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে)। সম্ভবত এই জনমত জরিপে এটাই দেখানোর চেষ্টা চলছে যেখানে বিএনপি কোন ভালো ব্কিল্প নয় তাহলে সরকারকে কেন বিব্রত করা হচ্ছে?

এখন বিএনপি কিভাবে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় আসছে এটা কিছু সময়ের জন্য অপরিস্কার। পার্লামেন্ট থেকে বাইরে থাকা দলটি এখন গুন্ডা ও ঠগদের উপর নির্ভর করছে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য। স্বামীর খুব কাছাকাছি থাকা উপদেষ্টাদের পরামর্শ অনুযায়ী নির্বাচন থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্তটি সঠিক কাজ হয়েছে বলে মনে করছে খালেদা জিয়া। দলের সংস্কার করছেন বলে তিনি জানান এবং তার ছেলে রাজনৈতিকভাবে ফিরে আসছেন বলে মনে করেন তিনি। তার বড় ছেলে তারেক রহমান অনেকটা রাজনৈতিক নির্বাসনে লন্ডনে অবস্থান করছেন। বেগম জিয়া এটাও ঘোষণা করেন তিনি ওই মহিলারমত প্রতিশোধের প্রতি আগ্রহী নয়।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে অনেক তরুণের আগমন ঘটবে দলে কিন্তু দেশে দলটিকে বিভক্ত করবে এবং বিদেশে নি:সঙ্গ করবে। উইকিলিকসের ফাস হওয়া তথ্যমতে জানা যায় ২০০৮ সালে মার্কিন কূটনীতিকরা তার পাঠাচ্ছিলেন তখনকারসকল রাজনৈতিক সংকটের জন্য তারেক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দায়ী।এদিকে তারেকের পক্ষের লোকেরা বলার চেষ্টা করে তারেকের বিরুদ্ধে যেসব দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সেগুলো আসলে তার সাঙ্গপাঙ্গদের যারা তার সাথে সম্পর্কের সুবাধে বিশেষ সুবিধা আদায় করে নিয়েছিল।

মা-ছেলে জুটি যারা ইসলামিস্ট দলগুলোর প্রতি সমর্থন রাখে তাদের সাথে কাজ না করে শেখ হাসিনার সাথে কাজ করতে পেরেই সন্তুষ্ট বিদেশি সরকারগুলো। হাসিনার উপর সমর্থন প্রত্যাহারের কোন কারণ দেখছেনা নরেন্দ্র মোদি। হাসিনার উপর সমর্থন রাখা কংগ্রেসের এই পলিসির সাথে মোদির কোন বিরোধ নেই। তারপরও বাংলাদেশের সাথে একটি শক্ত ও দৃঢ় অর্থনৈতিক সম্পর্ক ধরে রাখা এবং ইসলামিস্ট জঙ্গিদের বিরুদ্ধে একসাথে লড়াই করার ব্যাপারে তাদের যৌথ প্রচেষ্টা ধরে রাখতে আগ্রহী মোদি। এদিকে একটি সমুদ্র বন্দর পাওয়ার জন্য সাহায্যের খোলা চেক নিয়ে বসে আসে চীন। জাপান মাত্র ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ প্রদানের ঘোষণা দিয়ে গেল। বাংলাদেশ ও রাশিয়া দুটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করে দেখছে। যদিও এগুলো আদৌ প্রতিষ্ঠা হবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে। বিদেশিরা দেশটির প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সব মিলিয়ে, একটি মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের পরও শেখ হাসিনার সামনে এখন সুসময়। কোন শক্ত প্রতিপক্ষ ছাড়া তিনি এখন খুব কম চাপের মধ্যেই আছেন। যদি ২০১৯ সালে নির্বাচনে হারার কোন সম্ভাবনা দেখেন তখনই কেবল আগাম নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে পারেন শেখ হাসিনা। এই সময়ের জন্য দুজন বেগমের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে একজন জিতছেন এটা পরিস্কার।


ইকোনমিস্ট সাময়িকীতে ২০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত নিবন্ধের বাংলা তরজমা করেছেন সাবিদিন ইব্রাহিম

ইকোনমিস্টের লিংক:  http://www.economist.com/news/asia/21618888-opposition-takes-break-politics-government-tightens-its-grip-one-and-only-one?fsrc=rss|asi