প্রখ্যাত আমেরিকান শিক্ষাবিদ নোয়াম চমস্কি ৬ দশক ধরে ইরানিয়ান জনগনের উপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘নির্যাতনের’ পলিসির সমালোচনা করেন।
“গত ৬০ বছর ধরে এমন একটি দিন ছিলনা যেদিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জনগনের উপর নির্যাতন চালায়নি”, গত বুধবার ‘ডেমোক্রেসি নাউ’ এর সাথে একটি সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন।
“এই ৬০ বছর পুরো হয়েছে আজকের এ দিনটিতে। ১৯৫৩ সালের এ দিনটিতেই সামরিক অভ্যুথানের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের অবসান ঘটায়। এবং শাহ-এর মত একজন স্বৈরাচারী শাসককে ক্ষমতায় বসায়”।
গত আগস্টের শেষের দিকে সি.আই.এ একটি তথ্য প্রকাশ করে যে গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক এর বিপক্ষে ক্যু’তে ওয়াশিংটন সরাসরি যুক্ত ছিল।
আমেরিকার গোয়েন্দা বাহিনীর এ প্রকাশ্য স্বীকারোক্তি আসে ব্রিটিশ-আমেরিকার মদদে সামরিক অভ্যুথানের প্রায় ছয় দশক পর।
১৯৫৩ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশ ও আমেরিকার গোয়েন্দা বাহিনী ইরানিয়ান সেনাবাহিনীর মাধ্যমে অভ্যুথানের পরিকল্পনা করে। তারপর বিভিন্ন ঘটনার ছক আঁকা, তেহরানে দাঙ্গা বাধানো এবং তার ফলশ্রুতিতে চারদিন পর মোসাদ্দেক কে ক্ষমতা থেকে অপসারণ ও গ্রেফতার-এ সবকিছুর পেছনেই নাটের গুরুর ভূমিকা পালন করেছিল ইঙ্গ-মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী।
ইরাকি স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনের ইরানের বিরুদ্ধে আট বছর ব্যাপি চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার দিকেও ইঙ্গিত করেন চমস্কি। এ রক্তাক্ত যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ ইরানির মৃত্যু হয়েছিল। তেহরানের উপর ওয়াশিংটনের কঠিন অর্থনৈতিক অবরোধ দেশটির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুতা ও নির্মমতার সাক্ষ্যই দেয় কেবল।
“রিগ্যান ও প্রথম বুশ প্রশাসনের কাছে সাদ্দাম হোসেন এতই প্রিয় ছিলেন যে, যুদ্ধের ঠিক পরপরই ইরাকি পরমানুবিদদের যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ করেন পরমাণু অস্ত্র তৈরির উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য। ১৯৮৯ সালে সিনিয়র বুশ তাদেরকেই আমন্ত্রণ করেছিলেন যারা ইরানের উপর ভয়ানক হামলা ও যুদ্ধের মাধ্যমে দেশটির উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। যুদ্ধের পরপরই ইরানের উপর কঠিন অবরোধ আরোপ করা হয়। এবং এটা এখনো চলে আসছে। আমরা তাইলে ইরানীদের উপর নির্যাতনের ৬০ বছরের রেকর্ড পুরো করলাম। আমরা এদিকে নজর দিচ্ছিনা কিন্তু তাদের নজর দেয়ার যথেষ্ঠ কারণ রয়েছে। এইটা এক নাম্বার পয়েন্ট”। চমস্কি জোর দিয়ে বলেন।
বিশ্বখ্যাত এই বিশ্লেষক ইরানের পরমাণু শক্তি গবেষণার পক্ষে সংহতি প্রকাশ করে বলেন এন.পি.টি(অস্ত্র বিস্তার রোধ) অনুযায়ী ই ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচী চালিয়ে যেতে পারে। উল্লেখ্য ইরান এন.পি.টি (অস্ত্র বিস্তার রোধ) সাক্ষরদাতা একটি দেশ।
চমস্কি বলেন-“বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ‘জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন’ এর ভিতরে পরে এবং তারা তাদের সম্মেলনগুলো তেহরানে করে থাকে। এন.পি.টি চুক্তির সাক্ষরদাতা হিসেবে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচী জোড়ালো সমর্থন করে সবগুলো দেশ শুধুমাত্র ইজরাইল ও ভারত ছারা”
যুক্তরাষ্ট্র, ইজরাইল ও তাদের কিছু মিত্রদেশ মিথ্যাচার করে বলে যে ইরান সামরিক উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছে। তেহরান খুব দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করে আসছে যে এন.পি,টি-র সাক্ষরদাতা ও আণবিক শক্তি কমিশনের সদস্য হিসেবে শান্তিপূর্ণ কাজে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের অধিকার রয়েছে।
সূত্র: প্রেস টিভি
http://www.presstv.ir/detail/2013/09/14/323884/us-torturing-iran-for-60-years-chomsky/
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন