রবিবার, ২৪ মে, ২০১৫

হ্যামিলনের বংশীবাদক গফুর ভাই


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন বড় বড় গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। প্রখর রৌদ্রে একটু আশ্রয় নেয়ার জন্য সেসব গাছ খুবই দরকারী। কিছু কিছু মানুষও গাছের মত। তাদের ছায়ায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া যায়। বিশ্রাম নিয়ে আবার জীবনের পাগলা ঘোড়ায় চড়ে গন্তব্যে হাঁটার তাড়া পাওয়া যায়। একসময় নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বাসায় খুব সহজেই ছাত্ররা চলে যেতে পারতো, বাসায় থাবার দাবার সহ মানসিক ক্ষুধাও মেটানোর যথেষ্ঠ সুযোগ দিতো শিক্ষকরা। এখন শিক্ষকরা বিভিন্ন ভাড়া খাটাতে ব্যস্ত, ছাত্র-ছাত্রীরাও ইঁদুর দৌড়ে আছে। কেউ কাউকে সময় দিতে বা সময় নিতে পারছে না। এখনো অনেক সেরা শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন সংখ্যাটা কম হলেও।

আমিও অল্প কয়েকজন শিক্ষকের সহবত পাইনি যে এ কথা বলতে পারবো না। তবে আমি বেশিরভাগ জিনিস পেয়েছি রাস্তায়, ফুটপাথে, পথের মানুষদের কাছ থেকে। দেয়াল বিশিষ্ট চারকোণা ক্লাসরুম থেকে এই ছাদহীন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, এই উন্মুক্ত বিশ্ব থেকে অনেক শিখেছি, জীবনের গভীর অর্থের সন্ধান খানিকটা হলেও পাবো বলে মনে করছি।পুরোটা পেতে হলেও এই খোলা প্রান্তরের ক্লাসে শিক্ষা নিতে হবে বলেই মনে করি।

এই উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা প্রশিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, প্রফেসর তাদের একজন হচ্ছেন বংশীবাদক গফুর ভাই। যখনই ক্লান্ত হয়ে যেতাম জীবন দৌড়ে, বিভিন্ন পাপ, তাপ ও চাপ যখন কাঁধের জোয়াল হিসেবে দেখা দিতো তখনই নিজেকে হালকা করার জন্য ডাকসুতে গফুর ভাইয়ের বাঁশির সুরে হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতাম। ওনাকে তখন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালাই মনে হতো।

উনি আমার ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলেন কয়েকদিন! হ্যা, কবিতার খাতা নামে একটি বিশ পৃষ্ঠার একটা সাহিত্য পত্রিকা বের করেছিলাম। এটা ৫/৬ সংখ্যা বের হয়ে স্থগিত প্রায় আছে। তবে আমরা মাস দুয়েকের মধ্যেই পরবর্তী সংখ্যা নিয়ে আসছি। এখন দেখছি আমি একজন কবিকে মিস করছি আবার আমার ব্যবসায়িক পার্টনারকেও।
অবশ্য ব্যবসায় আমার কোনোদিন লাভ হয়নি বা এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবসায় আমি সফল হতে পারিনি। অবশ্য সবসময় সফলতার জন্য কাজ করতে নেই। সফলতার চেয়ে ব্যর্থতা অনেক বড় শিক্ষক!
প্রত্যেকবার ‘কবিতার খাতা’ বের করে গফুর ভাইয়ের কাছে ২০/৩০ কপি রেখে দিতাম। প্রত্যেকবার তাকে শর্ত জুড়ে দিতাম ৫০% আমার আর বাকি ৫০% তার। কিন্তু একবারও এক পার্সেন্টও ফেরত পেতাম না। আমি জানতাম তিনি ফেরত দেবেন না বা দিতে পারবেন না কিন্তু কৃত্রিম প্রকাশকের অভিনয় করতাম আর কি! কবিতা যে বিক্রি করা যায় না সেটা তো আমার জানা। তবে গফুর বিভিন্ন ফর্মূলা করে আমাদের সব কপি বিক্রি করে দিতো সেটাই অনেক ছিলো আমাদের জন্য, টাকাটা নয়।

চারুকলা আর ডাকসুর সামনের অত্যন্ত পরিচিত মুখটির অনুপস্থিতি নজরে পড়ছে। এই সাধারণ বৃক্ষতলায় একটু শান্তির বাতাস খুঁজে পাচ্ছিনা। গফুর ভাইদের মতো চরিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত জরুরী।

গফুর ভাইয়ের একটি প্রেমকাহিনী আছে সেটা কতটুকু সত্য সেটা জরুরী নয় কিন্তু এর গল্প ভ্যালু কম নয়। কোন একসময় যখন গফুর ভাই আরো তরুণ ছিলেন, মাথার চুলগুলো আরও বড় ছিল, যখন দীর্ঘসময় শ্বাস রাখতে পারতেন সে সময়কার কথা।

একদিন করুণ সুর বা রোমান্টিক সুর তুললেন বাঁশিতে। সেই বাঁশির সুরে লাইব্রেরি থেকে নেমে আসলো এক পরী। পরে জানা গেল সে বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিল। গফুর ভাইয়ের বাঁশির সুর সহ গফুর ভাইয়েরই প্রেমে পড়ে গিয়েছিল সেই পরী। অত:পর গফুর ভাই আর্থিক সাহায্যসহ বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে পরীটির পড়াশুনা শেষ হতে সাহায্য করেন। অবশেষে মেয়েটি যখন পড়াশুনা শেষ করলো তখন কোন এক ব্যাংকে চাকুরী নিয়ে গফুর ভাইকে ভুলে গেল। কারণ গফুর ভাইয়ের ব্যাংকে তো জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত আর বাঁশি ছাড়া আর কিছু জমা ছিল না। তাই পরীটি অন্য কাউকে বিয়ে করে সংসার বাঁধলো। গফুর ভাইও অনেক যত্নে সংসার সাজালেন। সে সংসারে তার সঙ্গী হচ্ছে দুঃখ-কষ্ট। এখন পর্যন্ত অসংখ্য বন্ধু তাকে ছেড়ে গেলেও দুঃখ তাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দিয়েছে। এজন্য তার কাছ থেকে মুক্তি নেই!

সত্য ঘটনাটা কেমন ছিল আসলে জানি না, কারণ দেখি নাই। গফুর ভাই এমন একটি প্রেমকাহিনীই বলেছেন।

আমাদের অনেক বন্ধু গফুর ভাইকে ‘গফুর চাচা’ বলে প্রচার চালাচ্ছেন দেখছি। গফুর ভাই এভাবে নিজেকে পছন্দ করেন না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৭ বছরের বেশি সময় ধরে থাকলেও তিনি ‘গফুর ভাই’ হিসেবে নিজেকে দেখতে চান। না ‘গফুর চাচা’ বা ‘গফুর মামা’। আর পাইকারী হারে ‘মামা’ বা ‘চাচা’ ডাকার ফলে ‘মামা’ বা ‘চাচা’ তার কদর হারিয়েছে। এটাকে অনেকেই অপমানজনক মনে করেন। মলচত্তরে একদিন দেখলাম একজন ২৫/২৬ বছর বয়সী কর্মচারীকে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ‘মামা’ সম্বোধন করায় সে বলে উঠেছিল, ‘আমাকে কি দেখতে মামা দেখায়?’
এটা স্পষ্টত সবাই পাইকারী হারে এই মামা সম্বোধন শুনতে পছন্দ করেন না। আমি মনে করি সবাইকে ভাই বলে সম্বোধন করলে দূরত্ব অনেক কমে মানুষের মধ্যে। গফুর ভাইকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনাকে নিয়ে যদি কোথাও লিখি তাহলে কি নামে লেখবো।
তিনি বলেছিলেন, ‘লেখবেন-বংশীবাদক গফুর ভাই’। তাই আমি মনে করি গফুর ভাই নামে ডাকাকেই সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়।

গত বছর রোজার সময় গফুর ভাইয়ের একটা সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম। সেটা একটা অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশও হয়েছিল। আলাপচারিতাটি এখানে তুলে ধরলাম আবার:
“সেদিন ইফতারের পর ক্যাম্পাসে গিয়েছিলাম। তখন মানুষের সমাগম ছিল একটু কম। এত মানুষ ক্যাম্পাসে কিন্তু তখনো পরিচিত কাউকে দেখছিনা। লাইব্রেরির সামনে আসার পর দেখি পেছন থেকে নাম ধরে ডাকছেন কেউ। পেছন ফিরে দেখি আমাদের চিরপরিচিত গফুর ভাই।

গফুর ভাই খুব ক্ষেপে আছেন। আমি কেন এত দ্রুত হাঁটি, একদিনও ওনাকে আগে দেখিনা এই নিয়ে বিস্তর অভিযোগের গাট্টি খুললো। আমিও ভালো মানুষের ভান করে উনার অভিযোগগুলো বলার সুযোগ করে দিলাম। দীর্ঘ একবছর ধরে উনাকে ঘুরাচ্ছি যে পত্রিকায় উনাকে নিয়ে একটা লেখা লিখে দেবো। কিন্তু এখনো এটা করা হয়ে উঠেনি।
তাই কোন ধরণের প্রস্তুতি ছাড়াই কালকে উনার সাথে বসে পড়লাম উনার সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য। কিছু প্রশ্ন অনেক আগে মাথায় ছিল আর বেশিরভাগ প্রশ্নই তৎক্ষণাৎ করা।

নিচে গফুর ভাইয়ের সাথে আলাপচারিতার কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো:
গফুর ভাইকে কি নামে ডাকবো বা পত্রিকায় কি নামে দেয়া যায় সে প্রশ্ন করলে গফুর ভাই জানায় তাকে ‘বংশীবাদক গফুর ভাই’ নামে ডাকার জন্য। তার কথাই সই।
কোথায় জন্ম আপনার?
গফুর: রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি থানার গোবিন্দপুর গ্রাম। পোস্ট অফিস রামদিয়া বাজার।
একেবারে সাধারণ প্রশ্ন ‘আপনার বয়স কত?’
আর কে নারায়নের নাম্বির গল্পকারের মত সঠিক বিত্তান্ত জানা নেই। জানবেই কেমন করে। এদেশের লেখাপড়া জানা অনেক শিক্ষিত জনেরই জন্মের ঠিক নেই(!) মানে জন্ম তারিখের ঠিক নেই সেখানে গফুর ভাইয়ের এটা নিয়ে জানার কোন সম্ভাবনাই নেই। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স কত ছিল এই সুতো ধরে এগুনোর চেষ্টা করলাম। তখন তার বয়স কত ছিল? গফুর ভাই জানান তার বয়স ছিল তখন ১০ কি ১২। সেই সূত্রে গফুর ভাইয়ের বর্তমান বয়স ৫০/৫২ বা ৫৪ হবে।
বিয়ে করেছেন কবে?
গফুর: ২২/২৩ বছর বয়সে।

একটা জিনিস লক্ষ্যণীয়, গফুর ভাইয়ের কাছে কোন প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই। সব আনুমানিক উত্তর।
ক্যাম্পাসে কবে এসেছেন এর জবাবে জানান প্রথম এসেছেন মুক্তিযদ্ধের ৭/৮ বছর পর। আবার আরেকবার বলেন ২৫/৩০ বছর বয়সে। তবে গত ১০/১৫ বছর ধরে একটানা ক্যাম্পাসে আছেন এটা নিশ্চিত করে বলতে পেরেছেন।
এখন রমজান মাস চলছে। তাই রোজা থাকেন কিভাবে এটা জিজ্ঞেস করলাম। তিনি কোন ধরণের কষ্ট বা ভনিতা না এনে সাধারণভাবে বলতে থাকেন যে এক বোতল পানি, দুটো বিস্কুট বা কাঁচা চাল খেয়ে সেহরি করেন। কাঁচা চাল না খেয়ে কেন সিদ্ধ করে ভাতের মারের সাথে খান না এটা জিজ্ঞেস করলে জানান যেখানে থাকেন সেখানে চুলার ব্যবস্থা নেই বা যাদের অনুগ্রহে থাকেন তারা সে ব্যবস্থা রাখেনি। তার মতই কোন পথের মানুষের সাথে হয়তো রাত কাটান গফুর ভাই। রাতে কেবল ঘাট্টি-বুচকা পাশে রেখে ঘুমাতে পারেন থাকার ব্যবস্থা বলতে এতটুকুই।

ইফতারের সময় অবশ্য গফুর ভাইকে পাওয়া যায়না। গতবছর অনেকবার চেষ্টা করেও আমার সাথে ইফতার করাতে পারি নাই। কারণ ক্যাম্পাসে অনেক বড় বড় ইফতার পার্টি থাকে। ইফতার হয়ে যায় বেশ ভালোই।
তবে বাকি এগারো মাস গফুর ভাইকে অনেক রাত রোজা থাকতে হয়। দিনের বেলা বিভিন্ন জনের সাথে চা নাস্তা বা ডাকসুতে খেয়ে ফেলতে পারলেও রাতে সেটা সাধারণত হয়না। এটা দেখলেই বুঝা যায়। অনেক সময় ক্ষুধা পেটে বা ক্ষুধা মুখে আশে পাশে আসেন। বেশিরভাগ সময়ই ওনার খাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারিনা। হয়তোবা একটা চপ বা পুরি এবং এক কাপ চা খাইয়ে বিদেয় জানাই।

গফুর ভাইয়ের সাথে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক! সেই চারবছর ধরে আমরা ‘কবিতার খাতা’ নামে একটি মাইক্রোম্যাগ বের করে আসছি। আমরা ৫/৬টি সংখ্যা মাত্র বের করতে পেরেছি। প্রত্যেকবারই উনার কাছে ২০/৩০ টি করে কপি দেওয়া হতো এবং খুব কড়া করে বলে দেয়া হতো ‘অর্ধেক টাকা কিন্তু আমাদেরকে দিবেন’। উনি হয়তো সব বিক্রি করতেন কিন্তু টাকা দিতেননা। উনি যে দিতে পারবেন না বা দিবেন না এটা মাথায় রেখেই উনার কাছে আমাদের বিভিন্ন প্রকাশনা দেয়া হতো। তারপরও দেখা হলে কৃত্রিম রাগ দেখাতে ছাড়িনাই কখনো। তবে উনি বেশ ভালো বন্ধু। কখনো কাছ ছাড়েনা। আমি যদি উনাকে নাও দেখি উনি দেখলে ঠিকই ডাক দিবেন, কাছে নিয়ে বসিয়ে সুখ দু:খের আলাপ করতে চাইবেন। সেক্ষেত্রে আমার হাতে সবসময় সময় থাকেনা। তবে যখনই উনার সাথে বসি, উনার বাঁশি শুনি, নিজের বানানো গান শুনি ততক্ষণ বেশ ভালোই লাগে।

একবার হয়েছি কি আমাদের ‘কবিতার খাতা’য় উনার একটা কবিতা ছাপা হয়েছে। তো আমার কাছে কবিতাটি ভালো লাগে নাই। কবিতার সমালোচনা করলাম। এতে গফুর ভাই বেশ চটে যায় এবং নিজের বিশাল কবিসত্তার ছাফাই গাওয়ার চেষ্টা করে এবং বলতে থাকে তিনি অনেক বড় কবি ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আধুনিক আর উত্তরাধুনিক কাব্যজ্ঞান নিয়ে উনার সাথে লড়াই করার চেষ্টা করলামনা। যেখানে হৃদয়ের মামলা সেখানে কারখানার কামলা খাটেনা। উনি যদি নিজেকে অনেক বিশাল কবি মনে করে তাহলে আমার ক্ষতি কি? এ দেশে তো অনেকেই নিজেকে অনেক কিছু মনে করে। মনে করায় কোন ক্ষতি নাই।

গফুর ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম জীবনে কি পেয়েছেন? বড় দার্শনিক প্রশ্ন! তিনিও খুব দার্শনিকতার সাথে উত্তর দেন ‘জীবনে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি’! বড় আজব উত্তর তো! পাল্টা প্রশ্ন করলাম, কেমনে? ‘এর পেছনে অনেক বেদনা আছে’, এতটুকু বলে থেমে যান। ‘কাকে পেয়েছেন’, এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম গফুর ভাইয়ের কোর্টে। গফুর ভাই এবার বর্ষার প্রমত্তা নদীর মতো দিল খুলে বলতে লাগলেন, ‘ঈশ্বরকে পেয়েছি। আমার মত সুখি কয়জন আছে? আমার হচ্ছে আল্লাহর চাকুরি। সারাদিন আল্লাহর জিকির করি। বাঁশি হচ্ছে মাধ্যম। চাকুরি করি শুধু আল্লাহর। আল্লাহকে ডাকলে পেটে ক্ষুধা থাকেনা।’

গফুর ভাইয়ের মত এমন ‘অশিক্ষিত’, ‘মূর্খ’, ‘গেয়ো’ মানুষ থেকে এমন ভারি কথা শুনে খানিকটা বিস্মিত হয়েছি। এই বিস্ময়টা কাটানোর জন্য পাল্টা প্রশ্নে চলে যাই। বললাম ‘জীবনে কি চান?’ এর জবাবে বলেন, ‘আমার চাওয়া পাওয়ার স্বাদ মিটে গেছে। আমার জীবনে কোন চাওয়া নেই।’ জীবনে চাওয়া আছে অনেক এমন লোকের কাছে এমন জবাব ধাক্কা খাওয়ার মতই। ধাক্কা-ই খেলাম!

জীবনে কোন কষ্ট আছে?
গফুর: জীবনে কোন কষ্ট নেই। যা চাওয়ার যা পাওয়ার সবই পেয়ে গেছি।

এই প্রশ্নটা আসলে অতিরিক্ত প্রশ্ন। যার জীবনে কোন চাওয়া নেই তার তো কোন কষ্ট থাকতে পারে না। তারপরও নিজের ব্যক্তিগত সংকট থেকে এই প্রশ্নটি করা এই আর কি!
একেবারে সহজ জিজ্ঞাসা, জীবনের লক্ষ্য কি গফুর ভাই?
গফুর: মানুষের সেবা। লাখো কোটি মানুষের সেবা।

কেমনে সে সেবা দিবেন সেটা উনিও বলেননি আবার আমার কাছেও পরিস্কার নয়। যেটা বলছেন বলছেনই।
জীবনে কি দেখেছেন
গফুর: অনেক কিছু।
ভালো লেগেছে কোনটা?
গফুর: আল্লাহর নাম ছাড়া কোন কিছুই ভালো না।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য কিছু বলতে চান কিনা?
গফুর: আর কিছুই কইতে চাইনা। মানুষ ছাড়া আল্লাহর কোন দলিল নাই। সেই মানুষটা হতে হবে।”

এই মানুষ, এই গফুর ভাই আজ ক্যাম্পাসে নেই। ক্যাম্পাসে তাকে সুস্থ করে আনতে হলে নাকি টাকা লাগবে, সেটা কতটুকু বেশি?
মানুষের চেয়ে বেশি?
মানুষের ভালোবাসার চেয়েও বেশি?




(আমার ক্ষমতা হচ্ছে এই মধ্যরাতে ২/৩ ঘন্টা ধরে এই লেখাটি শেষ করা। আপনার কতটুকু ক্ষমতা? পুরোটা দেই না, বন্ধু! আমাদের বন্ধু, ভাই বংশীবাদক গফুর ভাইকে ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনি না চলেন-)





সাবিদিন ইব্রাহিম
২৪ মে, ২০১৫
১৭৬ ফকিরের পুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
মেইল: sdibrahim385@gmail.com

বুধবার, ১৮ মার্চ, ২০১৫

সবচেয়ে আধুনিক ঘড়ি নিয়ে আসলো অ্যাপল


অ্যাপল এর সিইও টিম কুক অ্যাপলের ঘড়ির মডেল উপস্থাপন করলো সম্প্রতি। নতুন এই ঘড়িগুলো খুবই সহজে বহনযোগ্য এবং দামও হাতের নাগালে। দাম শুরু ৩৫০ ডলার থেকে।

ঘড়িগুলো কিভাবে সবচেয়ে আধুনিক? চারকোণাকার ঘড়িগুলোতে ডেবলপাররা গেমস যুক্ত করতে পারবেন। সেখানে আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয়াদি থাকবে, মোবাইলে ইন্টারনেট চালু না করেই ঘড়িতে অনেকগুলো কাজ করে ফেলা যাবে।
অ্যাপলের প্রধান টিম কুকের মতে এটা হচ্ছে ‘অ্যাপলের সবচেয়ে পার্সোনালাইজড পণ্য’।

অ্যাপলের ঘড়িটির আরও বিশেষ দিক হচ্ছে:
ঘড়িটিতে নতুন যোগের সকল অ্যাপগুলো যোগ করার সুবিধা রয়েছে। এ ঘড়িগুলোতে ওয়াচকিট নামে একটি নতুন সফটওয়ার ব্যবহার করা হচ্ছে। নিজের ইচ্ছামত অ্যাপ ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে ঘড়িগুলোতে।
অ্যাপল জানিয়েছে যে ঘড়িগুলোর তিনটি ভার্সান রয়েছে; দ্য অ্যাপল ওয়াচ, দ্য ওয়াচ স্পোর্ট আর দ্য ওয়াচ এডিশন। ৩৫০ থেকে দাম শুরু হলেও কিছু কিছু ঘড়ির দাম ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত। যেমন ওয়াচ এডিশনের দাম পড়বে ১০ হাজার ডলার। ঘড়িটি আঠারো ক্যারেট সোনা দিয়ে মোড়ানো হয়েছে।

ঘড়িগুলোর আরও মজার দিক হচ্ছে এগুলো আপনার ওয়ালেট হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। মানে হলে ম্যাকডোনাল্ড, সেফোরা, স্ট্যাপলস্, সাবওয়ে ইত্যাদি বড় রিটেইল স্টোরগুলোতে কার্ড মেশিনের মাধ্যমে দাম পরিশোধ করা যাবে। ঘড়িটি কার্ড মেশিনের সামনে রেখে দাম পরিশোধ করা যাবে।

ঘড়িগুলোতে অনেক শক্তিশালী ব্যাটারি যুক্ত করা আছে। এবং ম্যাগনেটিক চার্জার রয়েছে সেখানে এজন্য চার্জ করা নিয়ে আর ভাবতে হবেনা। ঘড়ি চার্জ দেয়ার জন্য কোথাও লাগানোর দরকার নাই। শুধু একটু ঘষা (স্ন্যাপ) দিলেই ম্যাগনেটিক চার্জার চালু হয়ে যাবে।
এখন এত বর্ণনা দিলাম এবার ঘড়িটা পাবো কেমনে? হ্যা আগামী এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ থেকেই বাজারে সবার জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে অ্যাপলের তৈরি সবচেয়ে আধুনিক ঘড়িগুলো।

সূত্র: এলিট ডেইলি

সত্যিকারের স্পাইডারম্যান এখন ব্রিটেনের রাস্তায়!


হলিউডের পর্দা ছেড়ে বের হয়ে এবার সত্যিকারের এক স্পাইডারম্যানের দেখা পাওয়া যাচ্ছে ব্রিটেনের রাস্তায়। দুস্থ, নি:স্ব ও অসহায় মানুষদের জন্য সময়ে সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সে স্পাইডারম্যান। ব্রিটেনের বার্মিংহামে রয়েছেন ওই স্পাইডারম্যান।

তবে ওনি সিনেমার স্পাইডারম্যানের মতো অসাধারণ ও অবিশ্বাস্য কোন স্টান্ট নেন না। তিনি শুধু স্পাইডারম্যানের মতো পোষাকই পড়েন কিন্তু কাজ করেন স্পাইডারম্যানের মতো! রাতের বেলা বার্মিংহামের রাস্তায় নেমে ক্ষুধার্ত ও ঘরহীন মানুষদের খাবার দেন।

এই নামহীন ছেলেটির বয়স বিশের কোঠায় হবে। এর আগে অনেক দাতব্য কাজে ছেলেটি অংশগ্রহণ করলেও তেমন নজরে আসেননি কারও। কিন্তু স্পাইডারম্যানের পোষাক পড়ার সাথে সাথেই তিনি বেশ আলোচনায় চলে আসেন বার্মিংহাম শহরে। তিনি বলেন যে এখন অনেক লোকই এই সেবামূলক কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে।
তিনি গত একমাস ধরেই বার্মিংহামের রাস্তায় এই সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এখন শহরের নতুন সেলিব্রেটি। এখনো তার উদ্দেশ্য সৎ বলে মনে করছে সবাই।

তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি সবার দিকে  মানুষ হিসেবে দৃষ্টি দেয়া উচিত। এবং অন্যের দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকানো উচিত যেন আমার কাছের বন্ধু।’
তিনি আশা করেন বার্মিংহাম একটি অসাধারণ থাকার জায়গা হবে।
বার্মিংহাম স্পাইডারম্যান নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্টে তার সকল কর্মকান্ডের খবর শেয়ার করছেন ওই নাম না জানা ব্যক্তিটি।

টুইটারে শেয়ার করা কয়েকটি ছবির মধ্যে একটিতে লেখা, ‘পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রতিবছর দ্বিতীয় ঘরের জন্য বিশ হাজার একশো পাউন্ড ভাতা পান সেখানে গৃহহীনরা এক পাউন্ডও পান না।’

সূত্র: এলিট ডেইলি

১০ দিন পর দেখা পুতিনের মুখ


রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দীর্ঘ ১০ দিন পর জনসমক্ষে আসলেন। তাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল গত ৫ মার্চ। ধারণা করা হয় তিনি অসুস্থ ছিলেন এজন্য গত ১০ দিন জনসমক্ষে আসেননি।
পুতিনকে সর্বশেষ জনসমক্ষে দেখা গিয়েছিল ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী মাতিও রেনজির সাথে।
এই ১০ দিনে কি করছিলেন পুতিন এটা নিয়ে বাতাসে বিভিন্ন কথা চাউর হয়ে গেছে। কথা শুরু হয় গত সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার কাজাখস্তানে নির্ধারিত সফর বাতিল হওয়ার পর থেকেই।
দশদিন পর কিরগিজ প্রেসিডেন্ট আলমাজবেক আতামবায়েভের সাথে এক সরকারী সাক্ষাতে মিলিত হন পুতিন। এক্ষেত্রে রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী জারদের নির্মিত সেন্ট পিটার্সবার্গের স্ট্রেলনিয়া রাজপ্রাসাদকে বাছাই করা হয় মিটিংয়ের জন্য।
এদিকে রাশিয়ার সরকারী টিভি চ্যানেল রুশিয়া টুয়েন্টি ফোর এই সাক্ষাতের কিছু ফুটেজ সম্প্রচার করে কিন্তু সেইসব ফুটেজগুলোতে কোন শব্দ শুনা যাচ্ছিল না।
ধারণা করা হচ্ছে এই দশ দিন অসুস্থ ছিলেন পুতিন অথবা ক্রেমলিনে কোন বিদ্রোহ ঠেকাচ্ছিলেন বা তার কোন বান্ধবীর গর্বে নতুন সন্তানের জন্মকে উদযাপন করতে গিয়েছিলেন।
তার এই দীর্ঘ অনুপস্থিতির পরপরই তিনি দেশটির নৌবাহিনীকে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতি নেয়ার আদেশ দেন।

সূত্র: বিবিসি

শনিবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫

কেমন ছিলেন সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ?


সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ শুক্রবার সকালে মারা গেছেন। সৌদি আরবের সরকারি বার্তা সংস্থার বরাতে খবরটি নিশ্চিত হয়। কি কারণে তার মৃত্যু হয়েছে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

উল্লেখ্য গত ৩১ ডিসেম্বর ফুসফুস সংক্রমণের কারণে রিয়াদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।
অনেকটা বৃদ্ধ বয়সে সিংহাসনে বসেও একজন সতর্ক সংস্কারক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। যখন আরব বসন্তে আরবের বড় বড় ক্ষমতাধর শাসকদের তখত সড়ে যায় সেখানে বহাল তবিয়তেই সৌদি রাজ তার ক্ষমতা ধরে রাখেন।
সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুতে অঞ্চলটিতে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যেই আইসিস ও ইরান সৌদির উপর বিশাল হুমকি হিসেবে দাড়িয়ে আছে। সেখানে বাদশাহ আবদুল্লাহর অনুপস্থিতি অনেক মিস করা হবে।
এদিকে সৌদি রাজ পরিবার খুব দ্রুত ক্ষমতার পালা পরিবর্তন করে ফেলে। আবদুল্লাহর ভাই ক্রাউন প্রিন্স সালমান ঘোষণা করেন বাদশাহ আবদুল্লাহ মারা গেছেন এবং তিনি বর্তমানে সৌদি বাদশাহ।


১৯৯৬ সাল থেকেই দেশ পরিচালনা করে আসছেন আবদুল্লাহ বিন আবদুল আজিজ। তার সৎ ভাই বাদশাহ ফাহাদ একটি মারাত্মক স্ট্রোকে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর থেকে মূলত আবদুল্লাহই রাজকার্য পরিচালনা করে আসছিলেন। ২০০৫ সালে ফাহাদের মৃত্যুর পর নিজেকে বাদশাহ বলে ঘোষণা দেন আবদুল্লাহ। তারপর থেকে বেশ দক্ষতার সাথেই নিজের ক্ষমতা সুসংহত করে আসছিলেন আবদুল্লাহ। তার এই শাসনকালে অনেক ক্ষমতাধর শাসকের শেষ পরিণতি দেখতে পেলেও তিনি তার ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছিলেন।

তার শাসকালে যে দুটি জায়গা থেকে হুমকি পেয়েছিলেন সেগুলো হলো সালাফিপন্থি ওহাবি ও আধুনিকপন্থী সৌদি নাগরিকরা। বাদশাহ নিজে মডারেট হলেও তিনি তেমন কোন সংশোধন নিয়ে আসেননি। বরং তার শাসনকালে কয়েকটি বড় ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।
বাদশাহ আবদুল্লাহ কে ছিলেন, কেমন ছিলেন?

আবদুল্লাহর শৈশব:
বাদশাহ আবদুল্লাহর শৈশব নিয়ে কমই জানা যায়। তিনি ১৯২৪ সালে রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা বাদশাহ আবদুল আজিজ বিন আবদুল রাহমান আল সৌদ (ইবন সৌদ) এর পঞ্চম সন্তান আবদুল্লাহ। আবদুল্লাহর মা ফাহদা বিনত্ আসি আল শোরাইম ইবন সৌদের অষ্টম স্ত্রী। আবদুল্লাহর ভাই বোনের সংখ্যা ছিল ৫০ থেকে ৬০ জনের মত।
আবদুল্লাহর জন্মের সময় তার বাবা আমির আবদুল আজিজ তখন মাত্র আরবের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল দখলে এনেছিলেন। ১৯২৮ সালে মক্কার শাসক শরীফ হোসেইনকে পরাজিত করেন আমির আজিজ। ১৯৪০ এর আগ পর্যন্তও সৌদি রাজ পরিবার অনেক গরীব ছিল। তার পর থেকে তেল বিক্রি করে সৌদি রাজের অর্থ প্রতিপত্তি বাড়তে শুরু করে।

শিক্ষাজীবন:
বাদশাহ আবদুল্লাহর শিক্ষা জীবন নিয়ে বেশি জানা যায়না। সৌদি আরবের আনুষ্ঠানিক তথ্য বিভাগ থেকে জানা যায় তিনি ‘ধর্মীয় শিক্ষায় আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ’ করেন। আবদুল্লাহ ব্যক্তিগতভাবে ব্যাপক পড়াশুনার মাধ্যমে নিজেকে শিক্ষিত করে তুলেন। ঐতিহ্যগত আরব শিক্ষা লাভ করার জন্য বেদুইনদের সাথে আরব মরুভূমিতে দীর্ঘদিন বসবাস করেন।

প্রাথমিক ক্যারিয়ার: 
১৯৬২ সালের আগস্ট মাসে আবদুল্লাহকে সৌদি আরবের ন্যাশনাল গার্ডের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এ বাহিনীর আওতার মধ্যে আছে সৌদি রাজ পরিবারের নিরাপত্তা, অভ্যুত্থান ঠেকানো ও দুটি পবিত্র শহর মক্কা ও মদিনার হেফাজত করা। এ বাহিনীর অধীনে আছে ১ লক্ষ ২৫ হাজার সেনা এবং ২৫ হাজার উপজাতীয় মিলিশিয়া।

রাজনীতিতে আগমন:

বাদশাহ ফয়সালের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের মার্চে তার সৎ ভাই খালিদ সিংহাসনে আরোহন করেন। বাদশাহ খালিদ প্রিন্স আবদুল্লাহকে দ্বিতীয় ডেপুটি প্রধান মন্ত্রী নিযুক্ত করেন।
১৯৮২ সালে বাদশাহ খালিদের মৃত্যুর পর বাদশাহ ফয়সাল সিংহাসনে বসেন এবং প্রিন্স আবদুল্লাহর আরেক দফা পদোন্নতি ঘটে। এবার তিনি ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। তিনি রাজ মন্ত্রীসভার সভায় সভাপতিত্ব করা শুরু করেন। তারপর বাদশাহ ফাহাদ তাকে ক্রাউন প্রিন্স এবং তার পরে বাদশাহ হবেন বলে ঘোষণা করেন।

ভারপ্রাপ্ত শাসক হিসেবে ভূমিকা
১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে টানা কয়েকটি স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বাদশাহ ফাহাদ অনেকটা শাসনকার্য পরিচালনার অনুপযুক্ত হয়ে পড়েন। তার এই অসুস্থতাকালীন ৯ বছর শাসনকার্য পরিচালনার ভার পড়ে আবদুল্লাহর উপরে।
২০০৫ এর ১ আগস্টে বাদশাহ ফাহাদের মৃত্যুর পর আবদুল্লাহ সত্যিকারের ক্ষমতার অধিকারী হন।

বাদশাহ হিসেবে আবদুল্লাহর ভূমিকা:
আবদুল্লাহ যখন ক্ষমতায় আরোহন করেন তখন সৌদি আরব ছিল মৌলবাদী ইসলামিস্ট ও আধুনিকপন্থি সংস্কারপন্থী এ দুই বিশাল ভাগে বিভক্ত। সৌদি আরবে মার্কিন সেনার উপস্থিতি নিয়ে তাদের ভিন্নমতকে জানান দেয়ার জন্য গোড়াপন্থীরা অনেক সময় বোমা হামলা ও কিডন্যাপের মত ভয়ানক ঘটনা ঘটাতো।
এদিকে আধুনিকপন্থীরা তাদের ব্লগ ও আন্তর্জাতিক প্রেসার গ্রুপের মাধ্যমে নারীদের বাড়তি অধিকার ও শরীয়া আইনের সংস্কার, ধর্মীয় ও প্রেসের স্বাধীনতার পক্ষে আওয়াজ তুলেন।
আবদুল্লাহ কঠিনহস্তে ইসলামিস্টদের দমন করেন কিন্তু তার কাছে যেসব সংস্কারের দাবি তোলা হয়েছিল তার সবগুলো বাস্তবায়ন করেননি।

পররাষ্ট্রনীতি
বাদশাহ আবদুল্লাহ তার পুরো রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেই একজন শক্ত আরব ন্যাশনালিস্ট হিসেবে পরিচিত ছিলেন কিন্তু তারপরও তিনি অনেকগুলো দেশ ভ্রমণ করেন এবিং বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করেন। তিনি প্রথম থেকেই মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় ‘গেমপ্লেয়ার’ হিসেবে নিজের অবস্থান টিকিয়ে রাখেন।

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন
৯০ বছর বয়সী বাদশাহ আবদুল্লাহ ৩০ জনেরও বেশি নারীর স্বামী ছিলেন এবং কমপক্ষে ৩৫ জন সন্তানের বাবা।
বাদশাহর সবচেয়ে ছোট ছেলে বদর যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন বাদশাহর বয়স ছিল প্রায় ৭০ এর কোঠায়। কিছুদিন আগে তার কনিষ্ঠা কন্যা সাহাবের বিয়ে হয় বাহরাইনের রাজা হামাদের ছেলের সাথে। সাহাবের জন্ম হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। ততদিনে বাদশাহ আবদুল্লাহর বয়স ৭০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
কিভাবে বাদশাহ আবদুল্লাহ এমন উৎপাদনক্ষম ছিলেন? এই রসালাপে রসদ দিয়েছে উইকিলিকসের একটি তথ্য। রিয়াদে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রে একটি ক্যাবল পাঠায় যেখানে উল্লেখ করা হয় বাদশাহ আবদুল্লাহ তখনো “একজন পাড় ধূমপায়ী, নিয়মিত হরমোন ইনজেকশন গ্রহণ করেন এবং অতিরিক্ত ভায়াগ্রা সেবন করেন”।

সৌদি দূতাবাসের সরকারী জীবনীতে বাদশাহ আবদুল্লাহ ঘোড়াকে খুব পছন্দ করতেন বলে উল্লেখ করা হয়। এমনকি পৃথিবী বিখ্যাত অ্যারাবিয়ান হর্স লালন পালনের জন্য ‘রিয়াদ ইকোয়েস্ট্রিয়ান ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পড়তে খুব পছন্দ করেন। রিয়াদ, ক্যাসাব্ল্যাঙ্কা ও মরক্কোতে  তিনি অনেকগুলো লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন।
বাদশাহ আবদুল্লাহর ব্যক্তিগত সম্পদের মূল্যমান প্রায় ১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বখ্যাত ফোবর্সের মতে তিনি ছিলেন বিশ্বের ৫ম ধনী রাজ পরিবারের সদস্য।
তার স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ও মানবাধিকার দেয়ার ক্ষেত্রে অস্বীকৃতির জন্য তাকে এশিয়ার শীর্ষ পাঁচ ‘জঘন্য স্বৈরশাসক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল।


সূত্র: ফরেন পলিসি, ফোবর্স, এশিয়ান হিস্ট্রি

স্ত্রী হত্যার অভিযোগে শশী থারুরকে যে ছয়টি প্রশ্ন করেছে পুলিশ



স্ত্রী সুনন্দা পুসকারকে হত্যার অভিযোগের খরগ অনেক আগে থেকেই ঝুলছে ভারতের কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা শশী থারুরের বিরুদ্ধে। দিল্লীর লীলা হোটেলে সুনন্দা পুসকারের মৃতদেহ পাওয়া যায়। এ সময় তার গায়ে ১৫টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। সুনন্দার মৃত্যুর পেছনে তার স্বামী শশী থারুরের হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। পাকিস্তানী সাংবাদিক মেহের তারারের সাথে গোপন প্রণয় নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য চলছিল বলে জানা যায়। সম্প্রতি ভারতের রাজনীতিবিদ ও খ্যাতিমান লেখক শশী থারুরকে এ ছয়টি প্রশ্ন করেছে দিল্লীর পুলিশ:
প্রশ্ন এক: কেন তার কক্ষে অ্যালপ্রাক্স পিল পাওয়া যায় যেটা ডাক্তারের ব্যবস্থায় ছিলনা?
প্রশ্ন দুই: তার শরীরে ১৫ টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়? আপনি কি তাকে আঘাত করেছিলেন?

প্রশ্ন তিন: তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়ার পর কেন হাসপাতালে নেওয়া হয়নি? কেন সাথে সাথে পুলিশ ডাকা হয়নি?
প্রশ্ন চার: কেন এআইআইএমএস পরিচালককে সুনন্দার মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ নিয়ে মেইল পাঠানো হলো?

প্রশ্ন পাঁচ: কেন আপনি এই খবর ছড়ালেন তার ‘লুপু’ হয়েছিল যেখানে আসলে তিনি সেটাতে আক্রান্ত হননি?

প্রশ্ন ছয়: আপনি মেহের তারারকে(পাকিস্তানী সাংবাদিক) কিভাবে চেনেন? আপনারা কি দুবাইয়ে একসাথে ছিলেন?

শশী থারুর কি জবাব দিয়েছেন তা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা চলছে।

সূত্র: টাইমস্ অব ইনডিয়া

কফি খান, চামড়ার ক্যান্সার ঠেকান

নতুন একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে যারা নিয়মিত কফি পান করেন তাদের চামড়ার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। দুরারোগ্য মেলানোমা চামড়ার ক্যান্সার আমেরিকায় অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাড়ায়।
গবেষণায় দেখা যায় যেসব ব্যক্তি দিনে ৪ কাপ অথবা তার চেয়ে বেশি কাপ কফি খান তাদের মেলানোমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা যারা খান না তাদের চেয়ে ২০% কমে যায়।

গত ২০ জানুয়ারি জার্নাল অব দ্য ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এ গবেষণাটি প্রকাশ করে।
গবেষণায় এ সতর্কতাও দেয়া হয়। কফি খেয়ে নিয়মিত সূর্যের আলোতে সানস্ক্রিন না লাগিয়ে গেলে তেমন কাজ হবে না। চামড়ার ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ সূর্যের অতি বেগুণী রশ্মি।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউট এর তথ্যমতে ২০১৪ সালে ৭৬,১০০ জন চামড়ার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৯,৭১০ জন এর মধ্যেই মারা গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে প্রাণঘাতী রোগের তালিকায় চামড়ার ক্যান্সার প্রথম সাড়িতে রয়েছে।

সূত্র: ইয়াহু হেলথ্